Uncategorized

Bengali poems on social thought


মানবিকতার প্রতি 

একটা রিক্রিয়েশন বলেও তো সত্যি কিছু চাই বলো?
সারা সপ্তাহের ক্লান্তি কাটে ,অবশ্য নতুন কিছু তো এ শহরে নেই। 
যদিও লাস্ট উইকেন্ড একটা ওয়াটারপার্ক গেছিলাম জানো ,
দারুন বানিয়েছে , তাই  একটু তো এক্সপেন্সিভ হবেই ।
আরে, রোজগার করে শুধুই ওড়াবো আমার কবেকার শখ।
কি হবে জমিয়ে রেখে ? পেনশন স্কিম আছে কেন?
নেশা করি না, এই বন্ধুবান্ধব আর  ফ্যামিলি নিয়েই সব ।
গাড়ি বাড়ি সব আছে আর কিসের প্ল্যান?

মুকুলের সখের মধ্যে তো খালি আছে  কয়েকটাই  মাত্র –
শপিং, নতুন ছবি দেখা ,রেস্টুরেন্টে খাওয়া  আর কিছুই নয় ।
আবার একটি উইকেন্ড, আবার ঘোরা যত্রতত্র;

এতো টাকা রোজগারের কত টুকুই বা খরচ করতে পারা যায় ?

একটা রেস্টুরেন্টের বাইরে তিন জন বন্ধুর  সানডে মিট ।
পুলোভার ভেদ করে শীতের হাওয়া মিশছে রক্তকণিকায় ।
মুকুল ও আশিষ  সমাজে দারুন ভাবে প্রতিষ্ঠিত ,
আর মানস সাধারণ কেরানি , তবে সচ্ছল ভাবে দিন চলে যায়। 

হঠাৎ আশীষের পুলোভারে টান,বলে “উঃ জ্বালাস না তো ,
যা ভাগ এখান থেকে।…, কোথা থেকে যে সব হাজির হয়?
শীতের সন্ধ্যায় পাতলা ফ্রক পরা বছর দশেকের মেয়েটা , “কিছু দাও,”
বলে ,দূরে তার মুমূর্ষু মা আর ছোট্ট ভাইকে দেখায়

“মা আমার বাঁচবে নাগো , ভাইটা আজ কিচ্ছু খাইনি ;
দয়া করে কিছু দাও কাকু, একটু কিছু খাবো ,বড্ডো খিদে পেয়েছে ।”
বিরক্ত মুকুল বলে ওঠে ,”এরা সব ঠগ ,জোচ্চোর , মিথ্যাবাদী,
এক পয়সাও দিও না , রাকেটের পান্ডা আশেপাশেই আছে 
  
“তোদের  সব জানা আছে ,নেশা করবি  টাকা নিয়ে ,
তোর বাবা মদ খাবে , আর তোরা চুরি করে বেড়াবি।  
খেটে খেতে পারিস না? পড়াশুনো কর এই বয়সে ,
সঠিক ভাবে চললে জীবনে আমাদের মতো দাঁড়াবি ।”

বাচ্চাটা সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো , চোখ ভরা জল  ,
“পড়ার টাকা নেই কাকু,মায়ের অসুখ,বাবা গত বছর একটা গাড়ির ধাক্কায়  …”
কথাটা শেষ করতে পারলো না, ভাই কাঁদছে তাই ছুটে গেলো ,
সমাজ সচেতন মুকুল ও আশীষ তখনো মুখর দেশ ও দশের চিন্তায় ।

মানস হঠাৎ নিস্তব্ধে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো ,
“এই যে এদিকে এস তো, এ টা নাও মনে হয় কাজে দেবে” 
পকেট হাতড়িয়ে একটা পঞ্চাশ  টাকার নোট তার  হাতে দিলো ,
“কিছু পুরোনো পোশাক আছে, তাকি তোমরা  নেবে?”

মেয়েটার চোখ খুশিতে চকচক করলো, সে কৃতজ্ঞ,
প্রকাশের ভাষা নেই , “নেবো কাকু”, বলে পরিবারের কাছে ছুটলো ।

মুকুল বলে, “কি করলে কি? এদের আস্কারা দিচ্ছ?
তোমাদের মতো লোকের জন্য সমাজ উন্নতি করে না,
লোক কর্ম বিমুখ হচ্ছে কারণ তোমরা ইন্ধন যোগাচ্ছ।
 অসামাজিক কার্যকলাপ আজকাল দৈনন্দিনের হিস্সা ।

আশীষ বলে ,”আর এই পাঁচ,দশ,বড়জোর পঞ্চাশ -একশো ,
এই দরিদ্র দেশের ,এই পতিত সমাজের কি দারিদ্র মেটাতে পারবে?
তোমার আমার কতটাই বা ক্ষমতা আছে বলো?
আর এতে কি লাভ? তুমি কি মনে করো বিরাট কিছু করলে?”

মানস একটু থেমে বলে, “সাধারণ কেরানি,তাই এর চেয়ে বেশি দিতে সাহস হয় না।
তবে তোমাদের পক্ষে হয়তো আরও অনেক দেওয়া সম্ভব।
মনে আছে স্কুলে স্যার বলতেন সবাই মিলে সমাজ গড়তে হবে? মনে আছে তাই না?
জানি না কি করে সম্ভব হবে যদি না হই সরব ।

মানবিকতা আজকাল বড়োই দুর্লভ।
হয়তো কিছু দুরাত্মা সমাজকে কলুষিত করছে ,
কিন্তু আমরা তো সঠিক শিক্ষা পেয়েছি,তাহলে কিসের অভাব?
অন্যের ব্যাথা অনুভব করতে কে আটকাচ্ছে?

একজনের পাপ কেন অন্যের বোঝা হবে?
যে অভাগা ,তাকে কিছু সৌভাগ্যবান কি বাঁচাতে পারে না?
আমাদের কাছে কণামাত্র পেলে যারা বাঁচবে,
তাদের সমবেত ভাবে বাঁচিয়ে রাখা কি যায় না?
হয়তো সকলে সংসার চালিয়ে বিশাল পদক্ষেপ নিতে পারে না?
কিন্তু যার মাস গেলে কিছু আয়ে আছে সেকি কিঞ্চিৎ ব্যায় করতে পারে না?
ওদের ফিরিয়ে না দিয়ে , ওদের পাপ পুণ্যের বিচার না করে,
আমরা কি অশান্তির মাঝে শান্তি  আনতে পারি না ওদের ছাদহীন ঘরে ?

একবার ভাব মুকুল, যদি তুমি ভাগ্য ফেরে গৃহহীন হও ,
একবার ভাব আশীষ ,যদি সন্তানের মুখে একদিন খাদ্য যোগান দিতে না পারো,
সেদিন কি মনে হবে না কেউ পাশে থাকলে ভালো হতো ?
সেদিন কি অনুভব করবে  না পাঁচটা টাকার মূল্য কত?”

Leave a comment